ঘরেই যেভাবে বুঝবেন আপনি সন্তানসম্ভবা?

এক জন শিশু পৃথিবীতে আসার সবার আগে জানেন মা। কারণ মায়ের পেটে ১০ মাস ১০ দিন স্থান হয় তার। এরপর সেখানে ধীরে ধীরে বড় হয়ে পৃথিবীর আলো দেখে শিশুটি। এ কারণে সন্তান পেটে আসার বিষয়টি ভালোভাবে জানা উচিত মায়েরও। তাই প্রত্যেক মায়ের সচেতন থাকা প্রয়োজন। আপনি কী মা হচ্ছেন? সেটা জানবেন কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য সাধারণত মায়েরা ডাক্তারের কাছে যায় অথবা বাজারে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য যেসব কাঠি পাওয়া যায় তার মাধ্যমে নিশ্চিত হই। তবে জানেন কী? মহিলারা চাইলে ঘরোয়া উপায়ে পরীক্ষা করতে পারেন, নিজেরা গর্ভবতী কিনা!

যে উপায়ে প্রাথমিকভাবে জানা যাবে, আপনি গর্ভবতী কিনা-
আপনি কী গর্ভবতী? আপনি (একজন মা) যদি গর্ভবতী হন, তাহলে প্রথমে লক্ষ্য রাখতে হবে পিরিয়ডের দিকে। জানতে হবে, পিরিয়ড কী নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে কিনা? যদিও বা প্রতিমাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মহিলাদের পিরিয়ড হয়ে থাকে (সাধারণত ২৮ দিন পর পর)। সেক্ষেত্রে, খেয়াল রাখতে হবে, আপনার পিরিয়ড ঠিক সময়ে হচ্ছে কিনা। যদি ২৮ দিন পর পর পিরিয়ড না হয়, তাহলে হয়তো আপনি গর্ভধারণ করেছেন। এরপর অন্যান্য লক্ষণগুলো মিলিয়ে নিতে পারেন।
পিরিয়ডের সময় আপনার যে পরিমাণ রক্তপাত হয়, সে পরিমাণ রক্ত যদি না যায়, তাহলে এটিকে অবহেলা করবেন না। ওই সময় বাইরে থেকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট এনে চেক করে দেখুন। তাহলে দেখা যেতে পারে, আপনি গর্ভধারণের দিকে ঝুঁকছেন।
এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের কিছু সমস্যা প্রতিনিয়ত থাকবে, যেমন- মাথা ঘোরা, বমি ও হজমে সমস্যা। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি প্রচণ্ড দুর্বল, মাথা ঘোরা ও বিষণ্ন লাগে এবং সেই সঙ্গে প্রায়ই হজমে সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য্য দেখা দেয়। তাহলে বুঝতে হবে, এটি গর্ভধারণের অন্যতম লক্ষণ।
গর্ভবতী মায়েদের ক্লান্তির যেন শেষ নেই। যদি হঠাৎ করে এই ধরনের অবস্থা দেখা দেয় এবং সময়ে অসময়ে কেবল ঘুমোতে ইচ্ছে করে, যা আপনার স্বাভাবিক রুটিনের বাইরে, অন্যান্য লক্ষণগুলোর সঙ্গে এই লক্ষণটি জানিয়ে দিবে, আপনি হয়তো গর্ভধারণ করেছেন।
তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন, আপনার কী বার বার প্রস্রাবের চাপ আসছে? স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাব করতে হচ্ছে? যদি আপনি বার বার এমনটা অনুভব করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সন্তান ধারণ করতে চলেছেন।
গর্ভবতী হলে মায়েদের স্তনে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে, আপনার স্তনের আকৃতি কিছুটা বৃদ্ধি পাবে ও নিপল গাঢ় রঙ ধারণ করবে। এবার আপনি খেয়াল রাখুন এই ধরনের কিছু হয়েছে কিনা! যদি তাই হয় তাহলে পরীক্ষা করে দেখুন।

এখন প্রশ্ন, পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন কীভাবে? খুব কম খরচে সাধারণত ওষুধের দোকানগুলোতেই প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার স্ট্রিপ পাওয়া যায়। প্রথম পিরিয়ডের ডেট মিস করার পরদিনই এটি দিয়ে টেস্ট করুন। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম প্রস্রাবে স্ট্রিপটি ডুবিয়ে রেখে পরীক্ষাটি করা সম্ভব। বিস্তারিত নির্দেশনা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে। একটু ভালোভাবে পড়ে দেখুন, তাহলে আপনি বুঝে যাবেন পুরো পদ্ধতি। সাধারণত প্রথম ১ মাসেই এটি ভালো নির্ণয়ের কাজ দেয়। আর এ থেকে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা। তবে যদি ফলাফল নেগেটিভ হয় আর সেই সঙ্গে আপনার পিরিয়ড বন্ধ থাকে, তাহলে কিছুদিন পর আবারো পরীক্ষা করুন।
প্রাচীন যুগে কীভাবে সনাক্ত করা হত, একজন নারী গর্ভবতী?
আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগে মানুষের প্রস্রাব বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা শনাক্ত করার পদ্ধতি আবিষ্কার হয় মিশরে। যদিও বা সব নারীর কাছে এই পদ্ধতি পৌঁছায়নি। তারপরেও যদি কোনো নারীর সময় মতো মাসিক বা ঋতুস্রাব না হতো, তাহলে ধারণা করা হতো, সে গর্ভবতী। এ ক্ষেত্রে ওই নারী গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত হতে তাকে সুরা পড়ে ও খেজুর খাওয়ানো হতো, যতক্ষণ না সে বমি করে। যদি সে নারী খুব দ্রুত বার বার বমি করত, তাহলে ধারণা করা হতো সে গর্ভবতী।
এরপর আসে গম-বার্লি পদ্ধতি, এই পদ্ধতিতে কোনো নারী গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত হতে তাকে একটি পাত্রে রাখা গম-বার্লির ওপর প্রশ্রাব করতে বলা হতো। যদি মূত্রে থাকা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে বীজ অঙ্কুরিত হতো, তা হলে মনে করা হতো যে, ওই নারী মা হতে চলেছেন। তবে এই পদ্ধতিগুলো খুব পুরনো। এখন এসেছে আরো কিছু সহজ পদ্ধতি।
আসুন জেনে নিই, কীভাবে ঘরোয়া পদ্ধিতে নিজের প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন-
১) ব্লিচ পরীক্ষা: একটা প্লাস্টিকের বাটিতে প্রশ্রাবের সঙ্গে কিছু ব্লিচের গুড়া মেশান। যদি ফেনা হতে শুরু করে, তা হলে বুঝতে হবে, আপনি মা হতে চলেছেন।
২) টুথপেস্ট পরীক্ষা: একটা প্লাস্টিকের বাটিতে প্রশ্রাবের সঙ্গে এক চামচ টুথপেস্ট মেশান। যদি টুথপেস্ট নীল হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে আপনি গর্ভবতী।
৩) ভিনিগার পরীক্ষা: একটি প্লাস্টিকের কাপে কিছু ভিনিগারের সঙ্গে আপনার প্রশ্রাব মেশান। যদি বুদবুদ তৈরি হয় আর মিশ্রণের রঙে পরিবর্তন ঘটে, তা হলে বুঝতে হবে আপনি সন্তান ধারণ করেছেন।
৪) চিনি: একটা বাটিতে প্রশ্রাবের সঙ্গে দু’-তিন চামচ চিনির দানা মেশান। যদি চিনি গলে না গিয়ে দলা পাকাতে বা জমাট বাঁধতে শুরু করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সন্তানসম্ভবা।
এই সব পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা সম্ভব, আপনি গর্ভবতী কিনা। তবে কিছু অর্থ থাকলে বলবো, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাহলে আপনি আর আপনার শিশু ভালো থাকবে।

Post a Comment

0 Comments